শুঙ্গ বংশ ( ১৮৫ – ৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ )
পুষ্যমিত্র শুঙ্গ:
- পুরান এবং হর্ষচরিত -এর তথ্য অনুসারে – ১৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৌর্য বংশের শেষ সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে তাঁর ব্রাহ্মণ সামরিক প্রধান পুষ্যমিত্র শুঙ্গ , শুঙ্গ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
- পুষ্যমিত্র গোঁড়া হিন্দু হলেও তাঁর আমলে মধ্যপ্রদেশের ভাড়ুতে বৌদ্ধ স্তুপ নির্মিত হয়।
- তিনি দুবার গ্রিক আক্রমণ প্রতিহত করেন ( প্রথমবার ডেমিট্রিয়াস এবং দ্বিতীয়বার – মিনান্দার ) ।
- কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্রম থেকে জানা যায় গ্রিকদের সাথে তাঁর সংঘর্ষ হয় এবং ব্যাকট্রিয়রাজ ডেমিট্রিয়াস তাঁর কাছে পরাজিত হন।
- কলিঙ্গরাজ খরবেলের আক্রমণকেও তিনি প্রতিহত করেছিলেন।
- তিনি প্রায় ৩৬ বছর রাজত্ব করেছিলেন।
- তিনি দুবার অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন, যার পুরোহিত ছিলেন মহাভাষ্য রচয়িতা পতঞ্জলি।
অন্যান্য শুঙ্গরাজা
- শুঙ্গবংশের দ্বিতীয় রাজা এবং পুষ্যমিত্রের পুত্র ছিলেন অগ্নিমিত্র শুঙ্গ।
- অগ্নিমিত্র ছিলেন কালিদাসের নাটক মালবিকাগ্নিমিত্রমের প্রধান চরিত্র।
- অগ্নিমিত্রের পরে শুঙ্গবংশের শাসকেরা হলেন – বসুমিত্র, বজ্রমিত্র, ভাগভদ্র, দেবভূতি প্রমুখেরা।
- শুঙ্গ বংশের শেষ রাজা হলেন – দেবভূতি।
কাণ্ব রাজবংশ (৭৫-৩০ খ্রি.পূ.)
- মগধের শুঙ্গ সাম্রাজ্যকে সরিয়ে ৭৫ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৩০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত ভারতের পূর্ব অংশ শাসন করেছিল কাণ্ব রাজবংশ।
- কাণ্ব রাজবংশ সম্বন্ধে জানা যায় মূলত পুরাণ এবং পতঞ্জলির মহাভাষ্য থেকে।
- পুরাণে কাণ্ব রাজগণকে ‘শুঙ্গভৃত্য’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
- শুঙ্গ রাজবংশের শেষ সম্রাট দেবভূতিকে হত্যা করে বাসুদেব কাণ্ব( ৭৫ খ্রিস্টপূর্ব - ৬৬ খ্রিস্টপূর্ব ) শাসনক্ষমতা দখল করে মগধে শুঙ্গ রাজবংশের শাসনের অবসান ঘটিয়ে কাণ্ব রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
- বাসুদেব শুঙ্গ সম্রাট দেবভূতির ব্রাহ্মণ মন্ত্রী ছিলেন।
- বসুদেবের পর রাজা হন তার পুত্র ভূমিমিত্র। তিনি ১৪ বছর রাজত্ব করেন( ৬৬ খ্রিস্টপূর্ব - ৫২ খ্রিস্টপূর্ব )।
- ভুমিমিত্রের পর তার পুত্র নারায়ণ পৈতৃক সিংহাসনে আরােহণ করেন। তার রাজত্ব ১২ বছর স্থায়ী হয়( ৫২ খ্রিস্টপূর্ব - ৪০ খ্রিস্টপূর্ব )।
- এই বংশের সর্বশেষ নরপতি সুশর্মা। তিনি নারায়ণের পুত্র ছিলেন এবং মাত্র ১০ বছর রাজত্ব করেন( ৪০ খ্রিস্টপূর্ব - ৩০ খ্রিস্টপূর্ব )।
- তিনি দাক্ষিণাত্যের সাতবাহনবংশের রাজা সিমুক কর্তৃক পরাজিত হয়েছিলেন।
চেতি/চেদি রাজবংশ
- মৌর্য রাজগণের দুর্বলতার সুযােগে এক স্বাধীন রাজ্যরূপে কলিঙ্গের উদয় হয়।
- যাদের রাজত্বকালে কলিঙ্গের এই অভ্যুত্থান তারা চেতি রাজবংশের মহামেঘবাহন শাখার লােক।
- পুরী জেলার উদয়গিরি পাহাড়ের একটি গুহা হাথীগুম্ফা। এই গুহার সম্মুখভাগে উৎকীর্ণ এক লেখে চেতি রাজবংশের কীর্তিকলাপ সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।
- মহারাজ খারবেল ওড়িশার চেদি রাজবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নৃপতি।
- হাথীগুম্ফা লেখ থেকে জানা যায় মহারাজ খারবেলের পূর্বে অন্তত দু’জন চেদি রাজা ওড়িশায় রাজত্ব করেছেন। অনেকে মহামেঘবাহন ও বক্রদেবকে খারবেলের দু’জন পূর্বসূরি বলে শনাক্ত করেছেন।
- ষোলাে বছর বয়সে খারবেল যুবরাজের পদ গ্রহণ করেন। তিনি যখন যুবরাজ তখন কলিঙ্গের রাজা কে ছিলেন তা জানা যায় না। চব্বিশ বছর উৎকীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খারবেল কলিঙ্গের রাজপদে অভিষিক্ত হন।
- সিংহাসনে আরােহণ করে তিনি মহারাজ, কলিঙ্গাধিপতি, কলিঙ্গচক্রবর্তী, মহাবিজয় প্রভৃতি রাজকীয় অভিধা ধারণ করেন।
- খারবেল তার রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে রাজা সাতকর্ণীকে অগ্রাহ্য করে অশ্ব, হস্তী, পদাতিক ও রথ বিশিষ্ট চতুরঙ্গ সেনা পাঠিয়ে মসিকনগর বা মুসিকনগর বা অসিকনগর নামক একটি শহর অধিকার করেন।
- রাজত্বের চতুর্থ বছরে খারবেল বিদ্যাধর নামে জনৈক রাজাকে পরাজিত করেন, তার রাজধানী অধিকার করেন। বিদ্যাধরকে পরাজিত করে খারবেল মহারাষ্ট্রের রাষ্ট্রিক ও ভােজকদের শােচনীয়রূপে পরাজিত করেন।
- রাজত্বের অষ্টম বছরে খারবেল গােরথগিরি ও রাজগৃহ অধিকার করেন। খারবেলের এই সামরিক অভিযানে জনৈক যবন রাজাকে পরাস্ত করেন।
- একাদশ রাজ্যবর্ষে কলিঙ্গরাজ দক্ষিণ ভারতে সামরিক অভিযান প্রেরণ করে করমণ্ডল উপকূলের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত পিথুণ্ড বা পৃথুল শহরটি ধ্বংস করেন ।
- পরের বছর মগধরাজ বৃহস্পতিমিত্র বা বৃহৎস্বাতীমিত্রকে পরাস্ত করেন। হাথীগুম্ফা লেখে দাবি করা হয়েছে, ওই একই বছর সমকালীন পাণ্ড্যরাজ মণি-রত্নসহ কলিঙ্গরাজের নিকট আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
- খারবেল জৈনধর্মের অনুগামী ছিলেন। কুমারী পর্বত বা উদয়গিরি পাহাড়ে জৈন সন্ন্যাসীদের বাসের উদ্দেশ্যে তিনি কয়েকটি গুহা খনন করেন।